ভূমিকাঃ আনসার বাহিনী বা আনসার সংগঠনের সহিত আমরা যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত তারা সকলেই জানি যে, ১৯৪৮ সনে প্রণীত আনসার আইনের মাধ্যমে আনসার বাহিনী সৃষ্টি করা হয়। মুসলমানদের কাছে ‘‘আনসার’’ শব্দটি বহুল পরিচিত এবং অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত। কারণ ইসলাম ধর্মের শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তাফা (সঃ) ইসলাম ধর্ম প্রচারকালে মক্কার ইসলাম বিরোধী শত্রুদের অত্যাচারের পরিপ্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে অনুসারীসহ মদিনা শরীফে গমন করেন। উক্ত সময়ে মক্কা হতে আগত ইসলামের অনুসারীগণকে সর্বোতভাবে যে সকল মদিনাবাসী সহায়তা করেন তাদেরকে ‘‘আনসার’’ বলা হইত। প্রকৃতপক্ষে আনসার শব্দটি আরবী শব্দ, যার বাংলা অর্থ সাহায্যকারী এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে আনসারকে ইসলামের সাহায্যকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ আনসার বলতে আমরা ইসলামের সাহায্যকারী ব্যক্তিকে বুঝি এবং আনসার বাহিনী বলতে ইসলামের সাহায্যকারী একটি বাহিনী বুঝায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আনসার বাহিনী বলতে আমরা বুঝি আইন-শৃংখলা রক্ষা এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নে আত্ননিবেদিত একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী।
স্বাধীনতাত্তোর তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে আইন-শৃংখলা রক্ষাসহ আর্থ সামাজিক উন্নয়নের উদ্দ্যেশে মদিনার আনসারগণের আদলে তদানিন্তন ‘‘পূর্ব বাংলা আইন সভা’’ একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর মর্যাদায় ১৯৪৮ সনে আনসার আইন প্রণয়ন করেন, যা সর্বপ্রথম ১৭ জুন ১৯৪৮ সনে ঢাকা গেজেটে (অতিরিক্ত সংখ্যা হিসাবে) প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ ১৭ জুন ১৯৪৮ সনে ‘‘আনসার আইন’’ সর্বপ্রথম বলবৎ বা কার্য্যকর হয়। ১৯৪৮ সনের ‘‘আনসার আইনে’’ আনসার বাহিনীর মূল বৈশিষ্ট্য ছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী এবং উক্ত আইনে আনসার অংগীভূত করার বিধান রাখা হয়েছিল। আনসার অংগীভূত হলে উক্ত অংগীভূত আনসার পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসাবে গণ্য হইত। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, একজন আনসার পুলিশ বাহিনীতে অংগীভূত হওয়ার সাথে সাথে আনসারের মর্যাদা হারিয়ে সে একজন পুলিশের মর্যাদা লাভ করত। অথচ আদর্শগত দিক থেকে আনসার বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী অনেকটা ভিন্ন প্রকৃতির।
যাহাহউক, ১৯৪৮ সালের পর আনসার বাহিনী তাদের আদর্শ এবং নিষ্ঠা ও কাজের মাধ্যমে জনগণের নিবিড় সান্নিধ্যে চলে আসে এবং একই সাথে আনসার সংগঠন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আসন দখল করে নেয়। এমতপরিস্থিতিতে ১৯৪৮ সালে প্রণীত ‘‘আনসার আইন’’ এবং ‘‘আনসার বিধি’’ সংগঠনকে সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত অপ্রতুল হয়ে পড়ে। যার কারণে আনসার বাহিনীর জন্য একটি পূর্ণমর্যাদা সম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই প্রয়োজনীয়তার তাগিদে বাংলাদেশের ৫ম জাতীয় সংসদ আনসার বাহিনীর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইন
সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করে, যাহা ১৫ ফের্রুয়ারী, ১৯৯৫ সনে ( ৩ ফাল্গুন ১৪০১ সন ) রাষ্ট্রপতির সম্মতি পাশ করে এবং ১৬ ফের্রুয়ারী ১৯৯৫ /৪ ফাল্গুন ১৪০১ সনে বাংলাদেশ গেজেটে অতিরিক্ত সংখ্যা হিসাবে প্রকাশিত হয়।
পরবর্তীতে গ্রামের আভ্যন্তরীন আইন শৃংখলারক্ষা ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আনসার সদর দপ্তরের তত্ত্বাবধানে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করা হয়। একই সাথে বাংলাদেশ আনসারকে যুগোপযোগী বাহিনী হিসাবে দেশের দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা ব্যুহের মর্যাদায় ব্যাটালিয়ন আনসার গঠন করা হয়। যার ফলে ৩ টি ধারায় এই বাহিনী পরিচিতি লাভ করে।
১। সাধারণ আনসার
২। গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী
৩। ব্যাটালিয়ন আনসার
দায়িত্বঃপূনর্গঠিত বাহিনীত্রয়কে ৩ টি বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়
1) বহিঃশক্রুর আক্রমন থেকে দেশকে রক্ষার জন্য জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে
সাহায্য করা।
2)আভ্যন্তরীন শান্তি শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীকে সাহায্য করা এবং
3)শান্তিকালীন সময়ে দেশ ও নিজের ভাগ্যোন্নয়নে আর্থ সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করা।
উপরোক্ত দায়িত্বাবলীর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী
দেশের সর্বস্তরের মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু কালের প্রবাহে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী পরিচালনায় যুগোপযোগী আইনের প্রয়োজন হওয়ায় ১৯৯৫ সালে ১। আনসার বাহিনী আইন ২। গ্রাম প্রতিরক্ষা দল আইন ৩। ব্যাটালিয়ন আনসার আইন এবং ৪। আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক আইন নামে ৪ টি আইন জাতীয় সংসদে পাশ হয়। উক্ত আইনগুলোর আলোকে ১৯৯৬ সালে মহাপরিচালক কর্তৃক প্রণীত প্রবিধানমালা অনুযায়ী বর্তমানে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী পরিচালিত হচ্ছে।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিটি জেলায় একটি প্রশাসনিক ইউনিট আছে। যার সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রতি উপজেলা তথা গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। টাঙ্গাইল জেলার আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ের জনবলের বিবরণ নিম্নরূপ ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস